ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোন সংযোগ নেই। তাই জামায়াতে ইসলামী সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদের বিরোধী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নিম্নলিখিত পুস্তিকা এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে:
"ইসলাম আল্লাহ মনোনীত, রাসূল (সা.) প্রদর্শিত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যার লক্ষ্য দলমত, জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সর্বস্তরের জনমানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি দেওয়া।
ইসলামের আদর্শ যারা গ্রহণ করে, শুধু তাদেরই নয়- যারা ইসলাম গ্রহণে ব্যর্থ হয় বা বিরত থাকে ইসলাম তাদেরও মৌলিক চাহিদা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম কর্ম পালনের সুযোগ দেয়, তাদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ইসলাম গ্রহণ করা না করার বিষয়টি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উপর স্বয়ং আল্লাহই ছেড়ে দিয়েছেন এবং এক্ষত্রে বল প্রয়োগ করা নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালার ঘোষণা-
"যার মন চায় সে ঈমান আনবে, আর যার মন চায় সে কুফরী করবে।" (সূরা আল কাহফ - ২৯)
আল্লাহ তা'য়ালার আরো ঘোষণা :
"আমি তাদের সামনে দুটি পথই দেখিয়েছি। একটি মানুষের রবের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পথ, অপরটি তাদের রবকে অস্বীকার করার (কুফরীর) পথ।" (সূরা আদ-দাহর - ২)
আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে-
"দীন গ্রহণে কাউকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা যাবে না। সত্য পথ গোমরাহী বা ভুল পথ থেকে সুস্পষ্টভাবেই পৃথক হয়ে পড়েছে।" (সূরা আল বাকারা - ২৫৬)
এই আয়াতটি থেকে স্পষ্ট যে দিক নির্দেশনা মিলে তা হল নবী-রাসূল এবং তাদের অনুসারীদের কাজ হলো সত্য দীনকে ভ্রান্ত দীন ও মতবাদ থেকে স্পষ্টভাবে পৃথক করে দেখানো যুক্তি-প্রমাণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে। বল প্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে বাধ্য করা তাদের কাজ নয়। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (সা.) পর্যন্ত এ ভাষায় সতর্ক করেছেন-
"তোমাকে তো উপদেশ প্রদানকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে- বল প্রয়োগকারী রূপে নয়।"
বাস্তবে নবী-রাসূলগণ আল্লাহর নির্দেশে যুগে যুগে ইসলামের দাওয়াত উপস্থাপন করেছেন মানুষের একান্ত দরদী বন্ধু হিসেবে, বিশ্বস্ত কল্যাণকামী ও একনিষ্ঠ উপদেশ দানকারী হিসেবে। তাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন; কিন্তু প্রতিশোধ নিতে যাননি।
শান্তির স্বার্থে, অশান্তি ও ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কবল থেকে মজলুম মানবগোষ্ঠীকে মুক্তি দেবার স্বার্থে, যুদ্ধ অবশ্যই কারো কারো জীবনে করতে হয়েছে। তবে তা হয়েছে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে, নিছক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে জালেমের জুলুম নির্যাতন ও ফিতনা-ফাসাদের মূলোৎপাটন করে সমাজে শান্তি, কল্যাণ ও ন্যায়-ইনসাফ এবং মানুষের জানমাল ইজ্জত আব্রুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যেই।
আধুনিক বিশ্বে সন্ত্রাসের যে চিত্র আমরা দেখি, ইসলামী আদর্শ এবং শিক্ষা সংস্কৃতির সাথে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে তার দূরতম কোন সম্পর্কও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এরপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান বিশ্বের এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে, ইসলামের পক্ষে গণজাগরণের শুভ সূচনার ইশারা যখন স্পষ্ট- ঠিক সেই মুহূর্তে মুসলিম নামধারী এক শ্রেণীর বিপথগামী পথভ্রষ্ট ও অপরিণামদর্শী অর্বাচীন লোকদের পক্ষ থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়ায় ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্যে সৃষ্ট সম্ভাবনা হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, বিশ্বব্যাপী জড়বাদী বস্তুবাদী সভ্যতার পতনের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখে ভীত-শংকিত একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী তাদের কায়েমী স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে চতুর্মুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই যড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্যে মুসলিম উম্মাহর ওপর ক্র্যাকডাউনের যে প্রেক্ষাপট দরকার ইসলামের নামে সন্ত্রাসকারীরা সেই প্রেক্ষাপট তৈরির কাজটাই করে যাচ্ছে।
ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত কোন কার্যক্রমের সাথেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগতিপূর্ণ নয়- এটা যেমন দুনিয়াব্যাপী মুসলিম উম্মাহর স্বীকৃত পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, দল ও প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে সুস্পষ্ট তেমনি সুস্পষ্ট মুসলিম উম্মাহর কাছেও।
এতদসত্ত্বেও জায়নবাদী প্রচারণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় একশ্রেণীর মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারাকে তথাকথিত ইসলামী জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। অথচ সন্ত্রাসের সংজ্ঞা, যুগে যুগে সন্ত্রাসবাদের খণ্ড চিত্র এবং সন্ত্রাসবাদের আধুনিক রূপ এর কোনটার সাথেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত কার্যক্রমের কোন সাজুয্য থাকার প্রশ্নই উঠে না।
সন্ত্রাসের মূল কথা- মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে, জানমালের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কোন কিছু করতে বাধ্য করা। এটা রাজনৈতিক রূপ নিলে যার অর্থ দাঁড়ায় "সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর সংখ্যালঘিষ্ঠের মতকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া।" "সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর সংখ্যালঘু কোন গোষ্ঠীর মতামত চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যে ভয়ংঙ্কর ভীতিকর, অমানবিক পৈশাচিক ও অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় বল প্রয়োগের মাধ্যমে" তাকেই আমরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। যার সাথে ইসলামী আদর্শের মূলনীতি এবং শিক্ষা-দীক্ষার কোন দূরতম সম্পর্কই থাকতে পারে না।
এ সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্য সুস্পষ্ট :
"আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না-যতক্ষণ না সে জাতি নিজে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়।" (সূরা আর রা'দ-১১)
শেষ নবী (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। মক্কায় প্রথম ওহি নাযিল হয়। দীর্ঘ তের বছর মক্কাতেই তিনি দাওয়াত দিতে থাকেন এবং ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু মক্কার আগে মদীনায় ইসলাম বিজয়ী হয় কিভাবে? উত্তর একটাই। মক্কাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম গ্রহণে সক্ষম হয়নি- পক্ষান্তরে মদিনাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম গ্রহণে ও রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে এগিয়ে আসার কারণেই মদীনায় ইসলাম বিজয় লাভ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার গোড়া পত্তন হয়। আল কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা ও রাসূল (সা.)-এর বাস্তব আমলকে উপেক্ষা করে মনগড়াভাবে কেউ ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখতে পারে না। আর দেখলে তা ইসলাম সম্মত হতে পারে না।
ইসলামের সাথে কোন প্রকারের সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক থাকতে পারে না, থাকার প্রশ্নই উঠে না, এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা এ পর্যন্ত সংক্ষেপে সে কথাটিই বলার প্রয়াস পেয়েছি। এই পর্যায়ে আমরা সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা ও এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরতে চাই- The World Book Encyclopedia ১৯৮৯ edition, Page ১৭৮-১৭৯ থেকে, এই আশায় যে পাঠক নিজেই এর সাথে মিলিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, আমরা যে দাবি করেছি সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলামকে সম্পৃক্ত করার আদৌ কোন সুযোগ নেই, তা কতটা যথার্থ।
TERRORISM (সন্ত্রাসবাদ)
Terrorism is the use or threat of violence to create fear and alarm. Terrorists murder and kidnap people, set off bombs, hijack airplanes, set fires, and commit other serious crimes. But the goals of terrorists differ from those of ordinary criminals. Most criminals want money or some other form of personal gain. But most terrorists commit crimes to support political causes.
সন্ত্রাসবাদ হলো ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সহিংসতার প্রয়োগ বা প্রয়োগের হুমকি দেয়া।
সন্ত্রাসীরা মানুষ খুন বা অপহরণ করে, বোমা নিক্ষেপ করে, বিমান-ছিনতাই করে, অগ্নিসংযোগ করে অথবা এ ধরনের মারাত্মক অপরাধ সংঘঠন করে থাকে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য সাধারণ অপরাধীদের লক্ষ্য থেকে ভিন্নতর হয়।
সাধারণ অপরাধীরা অর্থ বা অন্যবিধ স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বেশীরভাগ সন্ত্রাসী তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যেই অপরাধ ঘটিয়ে থাকে।
Most terrorist groups have a small number of members. They believe the threat or use of violence to create fear is the best way to gain publicity and support for their causes.
Common victims of terrorist kidnappings and assassinations include diplomats, business executives, political leaders, judges and police.
Terrorists simply choose any target certain to attract newspaper or TV coverage. They often threaten to kill the hostages if their demands are not met. Bombings make up about half of all terrorist acts.
Most terrorist groups fail to achieve their long range political goals.
বেশীরভাগ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সদস্যসংখ্যা কমই হয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করে সহিংসতার হুমকি বা প্রয়োগ যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাই তাদের প্রচার এবং তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা।
সাধারণত সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা অপহৃত ও নিহতদের মধ্যে রয়েছে কূটনীতিবিদগণ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিচারপতিবৃন্দ ও পুলিশ।
সন্ত্রাসীরা সংবাদপত্র বা টিভিতে প্রচার পাওয়ার উদ্দেশ্যে যে কোন টার্গেট বেছে নিয়ে থাকে।
তাদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে তারা প্রায়শঃই তাদের হাতে আটককৃতদের হত্যার হুমকি দিয়ে থাকে।
সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রায় অর্ধেকই বোমা নিক্ষেপ এর ঘটনা হয়ে থাকে।
অধিকাংশ সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থই হয়ে থাকে।
Terrorism may cross national boundaries. A quarrel in one nation may produce terrorist attacks in several other countries.
Some governments secretly support certain terrorist groups by providing weapons, training and money for attacks in other countries. *
সন্ত্রাসবাদ জাতীয় সীমানা অতিক্রম করতে পারে। একটি জাতির বিবাদ অন্যান্য দেশের ভিতরেও আক্রমণের জন্ম দিতে পারে।
কোন কোন সরকার সংগোপনে কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী গ্রুপকে অন্য দেশের মধ্যে আক্রমণের জন্য অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকে।
উপরোল্লিখিত সংজ্ঞার সাথে আমরা সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস সম্পর্কে উক্ত এনসাইক্লোপিডিয়ায় যা কিছু উল্লেখ করা হয়েছে তাও মিলিয়ে দেখতে চাই:
History of Terrorism
The word terrorism first appeared during the French Revolution (1789-1799). Some of the revolutionaries who seized power in France adopted a policy of violence against their enemies.
An American group, the Ku Klux Klan used violence to terrorize blacks and their sympathizers in 1865 and during 1900’s. In 1930’s the dictators Adolf Hitler of Germany, Benito Mussolini of Italy and Joseph Stalin of Soviet Union used terrorism to discourage opposition to their governments. **
সন্ত্রাসবাদ প্রথমে ১৭৮৯-১৭৯৯ এ ফ্রান্সের বিপ্লবের সময় দেখা দেয়। ঐ সময় যারা ক্ষমতা দখল করেছিল সে বিপ্লবীদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নীতি অবলম্বন করে।
একটি আমেরিকান গ্রুপ, 'কু-ক্লাঙ্ ক্ল্যান' ১৮৬৫ এবং বিংশ শতাব্দীতে সহিংসতা অবলম্বন করে কালোদের এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করার লক্ষ্যে। ১৯৩০ সালের দিকে জার্মানীতে স্বৈরশাসক হিটলার এবং ইটালীতে মুসোলিনী এবং রাশিয়ায় স্ট্যালিন সরকার বিরোধীদের নিরুৎসাহিত করার জন্যে সহিংসতা প্রয়োগ করে।
Another wave of terrorism began during the 1960’s. Terrorist groups that surfaced included the Red Brigades in Italy and the Red Army Faction in West Germany. Before the independence of Israel in 1948, a Jewish group used terror to speed the end of the British rule in Palestine and create a Jewish homeland.
Since 1960’s various Palestinian groups carried out campaign of terrorism aimed at.......the establishment of an independent Palestinian state.
The provisional Irish Republican Army, established in 1970 used violence in its fight to rid Northern Ireland of British rule.
A Puertorican Nationalist group called FALN Committed numerous bombings in US during 1970’s.*
আরো একটি সন্ত্রাসবাদের ঢেউ ১৯৬০ সালের দিকে শুরু হয়। যেসকল সন্ত্রাসবাদী গ্রুপে আবির্ভাব হয় তার মধ্যে ইটালীর 'রেড ব্রিগেড' এবং জার্মানীর রেড আর্মী অন্যতম। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের জন্ম লাভের পূর্বে একটি ইহুদী গ্রুপ সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে।
১৯৬০ সাল থেকে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রুপ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র লাভের উদ্দেশ্যেই সহিংস আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
১৯৭০ সালে গঠিত 'আইরিশ রিপাবলিকান আর্মী' সহিংসতার পথ অবলম্বন করে উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের লক্ষ্যে।
১৯৭০ সালের দিকে একটি পূর্টোরিকান জাতীয়তাবাদী গ্রুপ এফ এ এল এন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকগুলো বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটায়।
ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়ায় সন্ত্রাসবাদের যে ইতিহাস উল্লেখিত হয়েছে তার মধ্যে মুসলিম দেশ হিসেবে শুধু ফিলিস্তিনের কথাই আলোচনায় এসেছে। এখানে আমরা দুটো বিষয় আলোচনা করতে চাই।
এক.
ফিলিস্তিনের ভূমি-সন্তান ফিলিস্তিনীরাই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে নিজের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তারা সন্ত্রাস করেনি বরং সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হয়েছে। তারা নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রসমূহে আশ্রয় নিতে ও উদ্বাস্তু শিবিরে বছরের পর বছর বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৪৮ সন থেকে '৭৩ সন পর্যন্ত আরব ইসরাইল যুদ্ধে রাষ্ট্র হিসেবে মিসর, সিরিয়া ও জর্দানই ইসরাইলের প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করেছে।
ফিলিস্তিনীরা নিজেদের জন্মভূমি উদ্ধারের ও জন্মভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্যে এক পর্যায়ে গেরিলা যুদ্ধের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এটা সকল বিচারে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে আর স্বাধীনতা সংগ্রামকে কোন বিচারেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রূপে চিত্রিত করা সকল ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। তাই ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতা সংগ্রামকেও সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিত্রিত করা যায় না।
দুই .
ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামকে পুরোপুরি ইসলামের সাথে যুক্ত করাও ন্যায় বিচারের ধোপে টিকে না। বর্তমানে হামাসের কার্যক্রমকে ইসলামের সাথে যুক্ত করা ছাড়া আর কোন গ্রুপের কাজকে এ বিবেচনায় আনা যায় কিনা তা বিচার্য বিষয়।
ষাটের দশকে ফিলিস্তিনীদের মুক্তি সংগ্রামে শরীক গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রধান গ্রুপটি ছিল আল-ফাতাহ। তাদের আদর্শ আরব জাতীয়তাবাদ ও ফিলিস্তিনে সব ধর্মের লোকদের নিয়ে একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠনের অতিরিক্ত কিছু ছিল না। অপর একটি গ্রুপ আস-সায়েকা বামধারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
অপর যে গ্রুপটি অধিকতর উগ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল সেটির নাম ছিল পপুলার ফ্রণ্ট- যার নেতৃত্বে ছিল উগ্র বামপন্থী খ্রিস্টান নেতা জর্জ হাবাস। এই গ্রুপেরই পলিট ব্যুরোর সদস্য লায়লা খালেদ উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এই কাজটিকে সন্ত্রাসের পর্যায়ে অবশ্যই ফেলা যায়। কিন্তু এর জন্যে ইসলাম বা কোন ইসলামী গ্রুপকে দায়ী করা যায় না।
হামাস পরবর্তী পর্যায়ে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনসমর্থন পুষ্ট হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। পশ্চিমা জগতের কাছে ফাতাহ গ্রুপ গ্রহণযোগ্য। অথচ গেরিলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের প্রধান প্রতিষ্ঠান ছিল এই ফাতাহ গ্রুপ। পক্ষান্তরে হামাস ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ আন্দোলনের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সহানুভূতি অর্জনের প্রয়াস চালিয়েও তারা সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত এবং পাশ্চাত্যের কাছে অগ্রহণযোগ্য কেন, বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
আমাদের উপমহাদেশে বৃটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করেছেন হযরতে উলামায়ে কিরাম। তারা এই স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার অগ্রসৈনিক হিসেবে তদানিন্তন বৃটিশ ভারতে অকথ্য জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের একটি অংশকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসিত করা হয়েছে- কিন্তু তারা তাদের সংগ্রামকে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই পরিচালনা করেছেন। কখনও কোন অবস্থায় সন্ত্রাসের পথে যাননি।
সকলের জানা কথা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে সূর্যসেনের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অস্ত্র লুটসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হাতে নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করার লক্ষ্যে। ইতিহাস সাক্ষী সূর্য সেনের ঐ গ্রুপের সাথে এ দেশের আলেম-উলামা বা ইসলামী ব্যক্তিদের কোন সম্পর্ক ছিল না। আজ পর্যন্ত ইসলামী রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে সূর্য সেনের কোন সমর্থক খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নেই। এরপরও একশ্রেণীর পত্রপত্রিকা সন্ত্রাসের সাথে ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেই গায়ের জোরে তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
বিশেষ করে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি সর্বোপরি ইসলামী নীতি নৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে তারা বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। অথচ জন্মলগ্ন থেকেই জামায়াতে ইসলামী কঠোরভাবে যে কর্মনীতি অনুসরণ করে আসছে তার সাথে সন্ত্রাসের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই। আমরা এ সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র থেকে এর স্থায়ী কর্মনীতি হুবহু উদ্ধৃত করছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এর গঠনতন্ত্রের ধারা-৪-এ উল্লিখিত হয়েছে "জামায়াতের স্থায়ী কর্মনীতি নিম্নরূপ হইবে :
১. কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোন কর্মপন্থা গ্রহণের সময় জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ ও বিধানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করিবে।
২. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য জামায়াতে ইসলামী এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবেনা যাহা সততা ও বিশ্বাসপরায়ণতার পরিপন্থি কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয়।
৩. জামায়াত উহার বাঞ্ছিত সংশোধন ও বিপ্লব কার্যকর করিবার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করিবে। অর্থাৎ দাওয়াত সম্প্রসারণ এবং সংগঠন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লোকদের মন-মগজ ও চরিত্রের সংশোধন এবং জামায়াতের অনুকূলে জনমত গঠন করিবে।"
জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত এই স্থায়ী কর্মনীতি কেবলমাত্র গঠনতন্ত্রের পাতায়ই সীমাবদ্ধ নয় বরং শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতের যাবতীয় কার্যক্রম এই নীতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়ে আসছে।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন সদস্য অথবা কোন পর্যায়ের সংগঠন এ নীতি লংঘন করলে জামায়াত তা সংশোধনের জন্যে গঠনতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিতে কখনই পিছপা হয়নি।
গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত এই কর্মনীতির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর (রহ:) পবিত্র মক্কায় পবিত্র হজ্জ উপলক্ষে আগত ইসলামী দুনিয়ার নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণের একটি অংশের উল্লেখ করে লেখাটি শেষ করতে চাই। উক্ত বক্তব্যটি মাওলানা মওদূদী (র.) আরবী ভাষায় প্রদান করেন ১৯৬৩ সালের জুন মাস মোতাবেক ১৬ জিলহাজ্জ ১৩৮২ হিজরীতে। বক্তব্যের শিরোনাম ছিল "ইসলামী বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন সমূহের জন্যে কর্মপন্থা।" খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ এই বক্তব্যের মাধ্যমে মাওলানা মুসলিম বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত অথচ বস্তুনিষ্ঠ ও পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পর দিক নির্দেশনামূলক ৭টি মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেন। এর সর্বশেষ বা ৭ম পরামর্শের মূল কথা ছিল ইসলামী আন্দোলনের জন্যে কোন গোপন তৎপরতা এবং সশস্ত্র বিপ্লবের ধ্যান-ধারণা এবং কার্যক্রম অবলম্বন করা যাবে না। বরং অত্যন্ত কঠোরভাবে এগুলো থেকে আন্দোলন ও সংগঠনকে মুক্ত রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে ৬ষ্ঠতম পরামর্শে মাওলানা ছবর এবং হিকমত অবলম্বনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আর আন্দোলনের কোন পর্যায়ে গোপন তৎপরতা অথবা সশস্ত্র কর্মপন্থা গ্রহণ করাকে তিনি অভিহিত করেছেন ছবরের পরিপন্থি হিসাবে। তাঁর ভাষায় এই ধরনের কর্মপন্থার পরিণতি ইসলামী আন্দোলনের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। একটি সঠিক বিপ্লব সবসময় কেবলমাত্র জন সমর্থনের ভিত্তিতেই সংঘঠিত হয়ে থাকে।
মাওলানা এই ক্ষতিকর কর্মপন্থা পরিহার করে সমবেত ইসলামী নেতৃবৃন্দকে বলেন, "মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত ব্যাপকভাবে তুলে ধরুন। ব্যাপকভাবে মানুষের চিন্তাধারায়, মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। মানুষকে উন্নত আমল আখলাকে সজ্জিত করে তাদের হৃদয় জয় করুন। এই প্রচেষ্টায় বাধা প্রতিবন্ধকতা এলে সাহসের সাথে তার মুকাবিলা করুন। পর্যায়ক্রমে এই কর্মকৌশলের ফলে যে বিপ্লব সাধিত হবে তাই হবে স্থায়ী এবং সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত- যাকে প্রতিপক্ষের গৃহীত হাওয়াই-তুফান মিটাতে সক্ষম হবে না। দ্রুত সাফল্যের জন্যে তড়িঘড়িভাবে গৃহীত কোন পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে কোন বিপ্লব সংঘটিত যদি হয়েও যায় তা কখনও স্থায়ী হতে পারে না। বরং সেটা যেভাবে আসবে সেভাবেই বিদায় নেবে।"
জামায়াতে ইসলামী তার গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত কর্মনীতি যেমন কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে তেমনি এর প্রতিষ্ঠাতার দিক নির্দেশনার আলোকেই এযাবৎকাল নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল অবলম্বন করে আসছে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও কঠোরতার সাথে। এরপরও যারা যেন তেন প্রকারে গায়ের জোরে জামায়াতকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত করতে চায় এরা হয় জ্ঞানপাপী না হয় নিরেট অজ্ঞ। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।"
March 18, 2025
একটি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা অপরিহার্য। উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের কার্যকারিতায় নিম্নোক্ত শর্ত সমূহ পুরণ সুশাসনের জন্য অত্যাবশ্যক।
সামাজিক অপরাধ ও তার প্রতিকারঃ
আমরা মনেকরি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, নারীনির্যাতন, চোরাচালান মাদক ব্যবসাসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে শুধুমাত্র কঠোর আইন প্রয়োগই যথেষ্ঠ নয়। এর পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সন্ত্রাস নির্ভর পেশীবহুল রাজনীতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে জনগণ গণতন্ত্রের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়ার ফলে অপরাধীদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর উপর সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরাই বেশী অগ্রগামী। রাজনৈতিক প্রভাবের দরুন এরা শাস্তির আওতামুক্ত থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিতে এই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার ও চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজদের প্রশ্রয়দানের ফলে সমাজ থেকে অপরাধ দূর করা দূরহ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এর ফলে রাজনীতিতে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরা আগ্রহ হারাচ্ছে এবং জাতি সময়োপযোগী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিদ্যমান সামাজিক প্রভাব যুব সমাজকে সন্ত্রাস-প্রবণ করে তুলছে। এমতাবস্থায় সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতি বন্ধ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যদিও সন্ত্রাস রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছে তথাপি সাধারণ জনগণ এই ধরনের রাজনীতি চর্চার বিরোধী। জনগণের এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে দেশপ্রেম ও জনকল্যাণমুখি রাজনীতি জনপ্রিয় করা সম্ভব। এর জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরী। এর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার স¯প্রসারণ ও সন্ত্রাস বিরোধী প্রচারণা আবশ্যক। বৈধ গণতান্ত্রিক দলের উপর রাজনৈতিকভাবে আরোপিত সরকার কর্তৃক জুলুম নির্যাতন চরমপন্থাকে উৎসাহিত করছে। তাই জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা প্রতিরোধে গণতান্ত্রিক ধারায় স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক দল গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা করার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ থাকা জরুরী। তাছাড়া ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরী। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বিচারব্যবস্থায় সুশাসণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিচার কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করা ঠিক নয়। বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। এর জন্য সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সুশাসণ প্রতিষ্ঠায় বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হওয়া আবশ্যক। সমাজে নরীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রয়োজনীয় সামাজিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। নারীর পতিতাবৃত্তি গ্রহণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। পতিতাবৃত্তি নারী পাচারের প্রধান কারণ। তাই নারী পাচার রোধে পতিতাবৃত্তি বন্ধ হওয়া জরুরী। নিঃসন্দেহে এটি নারীর প্রতি চরম অবমাননা এবং সামাজিক ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ। তাই পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধে নৈতিক শিক্ষার সম্প্রসারণ, নারীর কর্মসংস্থনের ব্যবস্থা ও সামাজিক পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করা জরুরী। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অন্যতম প্রধান বাধা দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধ দুরুহ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়দান বন্ধ ও দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। মাদক যুব সমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি যুবসমাজের স্বক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে এবং পরিবারে ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ফলে পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে এবং সমাজে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মাদকের অবাধ প্রবাহ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। মাদকাসক্তি দূর করণে কঠোর ও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।
নারীর অধিকারঃ
আমরা মনেকরি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে নারী ও পুরুষের সমান ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা আবশ্যক। সমাজের এই অর্ধাংশকে পশ্চাতে রেখে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠন সম্ভব নয়। মানুষ হিসেবে উভয়ই নিজ নিজ অবস্থানে পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সমাজ গঠনে তার অবদান, দায়িত্ববোধ, সততা, ন্যয়পরায়ণতা, উন্নত নৈতিক ও মানবিক চরিত্র তাকে অপরোপারের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করে। তাই উভয়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থাই নারী বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। পারিবারিক পরিমন্ডলে তারা যেমন অবহেলিত তেমনি সামাজিকভাবেও অধিকার বঞ্চিত। পরিবারে তাদের মতামতকে বিবেচনা করা হয় না। মনে করা হয় নারীরা সুপরামর্শ দিতে অক্ষম। অপরপক্ষে তাদের মৌলিক পয়োজন পুরণেও গৃহকর্তা সচেষ্ট থাকেন না। ফলে তারা অনেক সময় মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হন। তাছাড়া অনেক পরিবারে নারী শিক্ষার ব্যপারে রয়েছে প্রবল অনীহা। বরং তারা এটিকে অবাঞ্ছিত বাড়াবাড়ি বলে মনে করে থাকে। ছেলের শিক্ষার ব্যপারে তারা যতটা পেরেশান মেয়ের শিক্ষার ব্যপারে তাদের ততটাই অণিহা। তাছাড়া অনেক পরিবারে মেয়েদেরকে সামাজিকীকরণে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়না। এমতাবস্থায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরালো ও কার্যকর ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবী। নারীর ব্যাপারে সমাজের এই বদ্ধমূল ধারনা দুরীকরণে একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। এজন্য নারী-পুরুষ বৈষম্য দুরীকরণে নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে নারীর যথাযথ সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সকলপ্রকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি। একটি আদর্শ পরিবার গঠনে নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক পরিমন্ডলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে নারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই উক্ত ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করা আবশ্যক। সম্পত্তিতে নারীর মালিকানা ও পর্নাঙ্গ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সামাজিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী যেন তার প্রাপ্য যথার্থ রূপে বুঝে পায় তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। নারীনির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ ও যৌতুক প্রতিরোধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
শিশু-কিশোর কল্যাণঃ
আজকের শিশু আগামী দিনের দেশ গঠনের কারিগর। তাই শিশুর শারিরীক ও মানসিক সুসমাঞ্জস্যপুর্ণ বিকাশ একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত। এক্ষেত্রে লিঙ্গীয় বৈষম্য কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রতিটি শিশুকে শিক্ষার আওতাধীনে আনা অপরিহার্য। দেশ থেকে শিশুশ্রম উচ্ছেদ করে সকল শিশুর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ও সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করা জরুরী। শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন ও বৈষম্য দুর করা আবশ্যক।
প্রতিবন্ধীর কল্যাণঃ
সমাজে প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্ত মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করা পয়োজন। তাছাড়া তাদেরকে উপযুক্ত সুযোগ ও শিক্ষা দিলে প্রগতিশীলতাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। তাদের সামাজিকীকরণ সহজতর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।
দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানঃ
দারিদ্র একটি সমাজের সবচেয়ে বড় অভিশাপ যেটি সমাজের সকল উন্নয়ন সুচককে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান সকল কিছুর মান দারিদ্র বৃদ্ধির সাথে সাথে কমে যায়। তাই সমৃদ্ধ দেশ গঠনে দারিদ্র প্রধানতম বাধা। তই এই দারিদ্র বিমোচনে খুব কৌশলী, সময়োপযোগী ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে কৃষিকার্যে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। কৃষকদের মাঝে উন্নত কৃষি উপকরণ বিতরণ, সেচ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত আর্থিক সহয়োগিতাদান আবশ্যক। উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যে স্বনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষে উন্নত বীজ সরবরাহ জরুরী।
শিল্পায়ন ছাড়া অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনায়ন সম্ভব নয়। তাই শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্্র ও বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান আবশ্যক। দেশীয় পণ্যের বাজার তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তাছাড়া নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বাত্তক সহযোগিতা দান জরুরী। তাছাড়া কর্মক্ষম জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রবাসে বাংলাদেশী শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শ্রমিকের অধিকারঃ
অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ শ্রমিক শিল্পোৎপাদনে বেশি ভূমিকা রাখে। একজন শ্রমিক যেন তার যথার্থ মজুরী যথা সময়ে বুঝে পায় তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরী এমন হওয়া উচিৎ যার দ্বারা সে তার পরিবারকে সাথে নিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষার সুবন্দোবস্ত হয়। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা ও কর্মঘন্টা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখা অপরিহার্য।
সংখ্যালঘুদের অধিকারঃ
বাংলাদেশ বিভিন্ন ছোট-বড় জনগোষ্ঠীর আবাস। বিভিন্ন শ্রেনী- হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান কিংবা ছোট-বড় উপজাতি সকলেই এ দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে সমান ভূমিকা রেখেছে। তাই আমরা মনেকরি এ দেশে বসবাসরত সকল মানুষের জন্য সমান ও অভিন্ন সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরী। জাতিভেদ কিংবা বর্ণভেদ কোন অর্থেই গ্রহণ যোগ্য নয়।
সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডঃ
আমরা মনে করি মানুষের সকল প্রকার চিন্তা ও কর্মধারার প্রকাশই হচ্ছে সংস্কৃতি। শিল্প ও সাহিত্যই কেবলমাত্র সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত উপাদান নয়, মানুষের মুল্যবোধ, বিশ্বাস ও তার জীবনধারাও সংস্কৃতির অঙ্গ। প্রত্যক সংস্কৃতি একটি নির্দিষ্ট জাতিসত্তাকে ধারণ করে এবং কতগুলো অপরিবর্তনীয় মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রত্যেক জাতি সংস্কৃতির মাধ্যমেই পৃথিবীতে তার অস্তি-ত্বকে সুচিহ্নিত করে। বাংলাদেশ এ ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারাবাহিকতাই একটি স্বতন্ত্র ও তাৎপর্যমন্ডিত সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। বহু সংস্কৃতির সংস্পর্সে এসে শুভ ও কল্যাণকে গ্রহণ করে সে যেমন নিজে সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি সমৃদ্ধ করেছে অপরাপর সংস্কৃতিকে। এখানে অঞ্চলভেদে সংস্কৃতির মধ্যে যে ভিণœতা তা এর মৌলিকত্বকে অক্ষুন্ন রেখেই সৃষ্টি হয়েছে এবং এ ভিন্নতা আমাদের সংস্কৃতিকে পূর্ণতা দান করেছে। সংস্কৃতির মৌলিকত্বের উপর আঘাত হানে এমন সকল প্রকার কর্মকান্ড অপসংস্কৃতি। আর এ অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক উপাদান সংরক্ষণ ও বিকাশে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
মানুষ নামক সৃষ্টির সেরা জীবটিকে সৃষ্টি করা হয়েছে দেহ ও মনের এক অপূর্ব সম্মেলনের মাধ্যমে। মানুষের উন্নতি ও উৎকর্ষতা বলতে মুলত শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রের ভারসাম্যপূর্ন অগ্রগতিকেই বোঝানো হয়। আর ইসলাম হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক মনোনীত একমাত্র পূর্নাংগ জীবন বিধান। এই জীবন বিধানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনের সার্বিক বিষয়াবলী নিয়েই দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম শুধু ইমান বা বিশ্বাসের কথাই বলেনা, বরং এর পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবহারিক আচরন নিয়েও কথা বলে। ইসলাম মানুষের আধ্যাতিক এবং বৈষয়িক সকল বিষয়েই পর্থ নির্দেশনা দেখায়।
আর জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হলো আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসুল (সা:) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা। জামায়াতে ইসলামী সকল মানুষকে, বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানায় এবং কুরআনের ভাষায় তাদেরকে দাওয়াত দেয়, “হে মানবজাতি, তোমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করো। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, মাবুদ নেই।”
জামায়াতে ইসলামী কুরআনের এই অমীয় বানীকে ভিত্তি করে নিম্নোক্ত ৩টি দফার মাধ্যমে মানুষের কাছে ইসলামের বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
• যদি আপনি দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পেতে চান, তাহলে কেবলমাত্র এবং একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সকল সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক এবং হযরত মোহাম্মাদ (সা:) কে জীবনের সকল পর্যায়ের একমাত্র অনুসরনীয় নেতা হিসেবে মেনে নিন।
• যদি আপনি এই আহবানে সাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সেই বিশ্বাস বা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক সকল ধরনের চিন্তা-ভাবনা, কার্যক্রম এবং অভ্যাস পরিহার করুন এবং আল্লাহর বিধান এবং তার রাসুলের প্রদর্শিত পথের বাইরে অন্য কোন কিছুর আনুগত্য না করার ব্যপারে ঘোষনা দিন।
• যদি আপনি মৌলিকভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করার ব্যপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন তাহলে অবশ্যই আপনাকে অসৎ এবং অযোগ্য নেতৃত্বকে হটিয়ে সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল পদে আসীন করার লক্ষ্যে নিয়মিত প্রচেষ্টা ও তৎপরতা চালাতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী সকল কাজ ও কর্মের মাধ্যমে সমাজে সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে চায়। তবে একটি স্থায়ী এবং কল্যানমুখী পরিবর্তনের জন্য সবার আগে মানুষের ভাবনা ও দর্শনকে সঠিক পথে বা সঠিক চিন্তাধারায় নিতে হয়। তারপর একই চিন্তাধারার মানুষগুলোকে সংঘবদ্ধ করে তাদেরকে যোগ্য নেতা ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এই দক্ষ মানুষগুলোকে সামাজিক সংকট সমন্ধে অবহিত হতে হয় এবং একই সাথে সেই সমস্যাগুলোকে জনহিতকর মানসিকতার মাধ্যমে সমাধান করার মত সক্ষমতাও অর্জন করতে হয়।
যদি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে জামায়াতকে কবুল করেন এবং জনগনের সমর্থনে যদি জামায়াত সরকার গঠন করতে পারে তাহলে জামায়াত ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশকে কুরআন ও হাদীসের আলোকে একটি কল্যানরাষ্ট্র বানানোর জন্য কাজ করবে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জামায়াত ৪ দফা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
১.ভাবনার বিশুদ্ধতা ও পুনর্গঠন:
ইসলাম প্রচারে এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার জন্য কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষের চিন্তা চেতনায় ও ভাবনায় শুদ্ধতা আনা এবং সেই জন্য এমন একটি প্রচেষ্টা পরিচালনা করা যাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ইসলামিক চেতনার বিকাশ ঘটে এবং তারা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ইসলাম অনুসরনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে।
২.সংগঠন ও প্রশিক্ষন:
ইসলামপ্রিয়, সচেতন এবং সৎ মানুষগুলোকে এবং সেই সাথে যারা সৎভাবে জীবন যাপন করতে চায় তাদেরকে ব্যবহারিক বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষন দেয়া যাতে তারা আল্লাহর খাস বান্দা হিসেবে আবির্ভুত হতে পারে। একই সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে যাতে তারা মানবিক কার্যক্রম চালাতে উৎসাহিত হয় এবং এরই পরিনতিতে তারা সমাজের যোগ্য ও সৎ নেতা হিসেবে আসতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মানসিকতা তৈরীতেও কার্যকর উদ্যেগ ও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
৩.সমাজ সেবা এবং সমাজ সংস্কার:
সমাজের সব শ্রেনীর মানুষের অবস্থান ও জীবন মান উন্নত করার উদ্দেশ্যে ব্যপকহারে সমাজ সেবা এবং সামাজিক কল্যানমুলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তাই মানুষের মধ্যে ইসলামিক সংস্কৃতির চর্চা এবং ইসলামিক নীতিমালার আলোকে মানব চরিত্র গঠন করা অপরিহার্য। একই সাথে অসামাজিক কার্যক্রম প্রতিরোধে মানুষকে সংঘবদ্ধ করাও জরুরী।
৪.সরকার ও প্রশাসনিক সংস্কার:
আভ্যন্তরীন প্রশাসন ব্যবস্থাপনা, পররাষ্ট্রনীতি, আইন ও বিধি-বিধান, মানুষের নৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থা, দেশের সামগ্রিক ও বস্তুনিষ্ঠ অগ্রগতি এবং সমাজের সকল স্তরে অসৎ ও অযোগ্য লোকের পরিবর্তে সৎ ও যোগ্য লোক বসানোর জন্য ইসলামী অনুশাসনের আলোকে সরকারকে পরামর্শ দেয়া একটি নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব।
কাজের প্রক্রিয়া:
• কর্মসূচীর প্রথম দফা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগায়োগ স্থাপন করে তাদেরকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারনা দেয় এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়নের জন্য আহবান জানায়। সংগঠনের মুরুব্বী ও দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিরা কুরআন এবং হাদীস ক্লাস পরিচালনা করেন এবং সাধারন জনগনের মাঝে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। জামায়াতে ইসলামী শহরে, নগরে এবং গ্রামীন এলাকার মানুষের মাঝে ইসলামের বার্তা পৌছে দেয়ার জন্য জনসভারও আয়োজন করে।
• দ্বিতীয় দফা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতে ইসলামী তাদেরকে সংঘবদ্ধ করে যারা তাদের আহবানে সাড়া দেয়। প্রথমে তাদেরকে সহযোগী সদস্য হিসেবে সংগঠনের অধীনে নিয়ে আসে এবং তারপর নিয়মিত নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষন দেয়ার কাজটি করে। একই সংগে তাদেরকে ব্যক্তিগত মান উন্নয়নের জন্য তাদেরকে নিয়মিতভাবে কুরআন ও হাদীস পাঠ এবং নানা ধরনের ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়নের উৎসাহ দেয়া হয়। তাদেরকে প্রত্যহ জামায়াতে নামাজ আদায় করতে হয়। তাদেরকে আবারও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন নতুন সহযোগী সদস্য তৈরী করার তাগিদ দেয়া হয়। একটি নির্ধারিত সময় পরপর তাদের কাজের অগ্রগতি সমন্ধে একটি রিপোর্ট বা প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়।
• তৃতীয় দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই নগদ অর্থ ও অন্যন্য সহযোগিতার মাধ্যমে গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কষ্ট ও দুর্দশা লাঘব করতে চেষ্টা করে। যখনই কোন দৈব বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ সমস্যায় পড়ে জামায়াত তখনই ঘটনাস্থলে ছুটে যেয়ে তাদের পাশে সাধ্যমত সাহায্য করে। জামায়াতে ইসলামী এর পাশাপাশি অসামাজিক এবং অনৈসলামিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে প্রচেষ্টা চালায়।
• চতুর্থ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতে ইসলামী জনগনের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা গড়ে তোলার জন্য উৎসাহ প্রদান করে কেননা দেশের অস্তিত্বের জন্য এই চেতনার বিকাশের কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বিবৃতির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী বিদ্যমান জাতীয় ইস্যু ও সংকট নিয়ে সরকারকে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করে। সরকার যেসব ভুল পদক্ষেপ বা নীতিমালা গ্রহন করে জামায়াত তার সমালোচনা করে এবং তা সংশোধনের জন্য পরামর্শ দেয়।
জামায়াতে ইসলামী দেশে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালায়। একটি সুস্থ ও শালীন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিনির্মানের জন্য জামায়াতে ইসলামী সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি পরমতসহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরীতে চেষ্টা করে। জামায়াতে ইসলামী জনগনের সমর্থন আদায় করতে চায় আর সেই কারনেই তাদের প্রতিনিধিদের সংসদে প্রেরনের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে আসছে। জামায়াত বিশ্বাস করে, এমন একটি সময় আসবে যখন দেশের মানুষ একটি ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠায় তাদের দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ী করে সংসদে পাঠাবে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যাশা হলো বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক কল্যান রাষ্ট্রে পরিনত করা। জামায়াত মনে করে, সেই ধরনের কল্যানরাষ্ট্র সেই সব ব্যক্তিদের মাধ্যমেই তৈরী করা সম্ভব যারা ইসলামকে সঠিকভাবে জানে এবং ইসলামের পরিপূর্ন চর্চা করার চেষ্টা করে। তাই কেবলমাত্র ইসলামের প্রকৃত অনুশীলনকারীরাই এই সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী কাউকে রেডীমেড নেতা হতে দেয়না। সদস্য না হলে কেউ এই সংগঠনের নেতা হতে পারেনা। আবার নেতৃত্বের জন্য প্রার্থী হয়ে প্রচারনা চালানোর সুযোগ এই সংগঠনে নেই। দলীয় নির্বাচনগুলো সব সময় নির্ধারিত বিরতিতে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর পর হয়ে থাকে। সেই নির্বাচনে দলের রুকন বা সদস্যরা সম্পুর্ন স্বাধীনভাবে গোপণীয়তা রক্ষা করে তাদের ভোট প্রদান করতে পারেন। সদস্যরা সাধারনত ইসলামিক চরিত্র, আনুগত্য, মর্যাদা, দক্ষতা এবং সাংগঠনিক মেজাজের প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের নেতা নির্বাচন করেন।
আপনাদের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, দয়া করে শোনা কথা বা অব্যহত মিথ্যা প্রচারনা-প্রপাগান্ডা বিশ্বাস করে আমাদেরকে যাচাই করবেন না। অনুগ্রহ করে জামায়াতকে অন্ধভাবে গ্রহনও করবেন না আবার না জেনে এই দলটিকে শুধু বিরোধীতার জন্য বিরোধীতাও করবেন না। দয়া করে, জামায়াতের কার্যক্রম থেকেই জামায়াত সমন্ধে আপনি সরাসরি ধারনা নেয়ার চেষ্টা করুন।
এই সংগঠন সম্পর্কে জানতে দলের ব্রুশিয়ার, সংবিধান এবং অন্যন্য সাহিত্য পড়াশুনা করুন। আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে এই আদর্শিক সংগঠনে যোগ দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বিশেষ করে ইসলামিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৭ সালে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর ১৯৭৯ সালের ২৫ থেকে ২৭ মে, ঢাকার ইডেন হোটেলে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভুত হয়।
March 18, 2025
আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে মূলত যে কাজটি করার জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তা কুরআনের তিনটি সূরায় স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, 'তিনিই সে মহান সত্তা (আল্লাহ) যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও আনুগত্যের একমাত্র সত্য বিধান (দ্বীনে হক) সহ পাঠিয়েছেন, যেন (রাসূল) তাকে (ঐ বিধানকে) আর সব বিধানের উপর বিজয়ী করেন।' (সূরা আত্ তাওবা : ৩৩, সূরা আল ফাত্হ : ২৮, সূরা আস সফ : ৯)
রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্র দ্বীনকে কায়েম করেই এ দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আইন, শাসন, বিচার, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তিনি আল্লাহ্র বিধানকে চালু করে প্রমাণ করেছে যে, ইসলামই দুনিয়ার জীবনে শান্তির একমাত্র উপায়। তাই দ্বীন ইসলাম কায়েমের দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাহাবায়ে কিরামও রাসূল (ﷺ)-এর সাথে এ দায়িত্বই পালন করেছেন। মুসলিম হিসেবে আমাদের সবারই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা কর্তব্য। এ দায়িত্ব অবহেলা করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি হাসিল করা কিছুতেই সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মুসলিদেরকে তাদের এই দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন করে যাচ্ছে। আমাদের সাথে আপনিও এই কাফেলায় সংযুক্ত হোন। মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালনে আমরা সবাই মিলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাই। ১৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। যারা এখনো জামায়াতে যুক্ত হননি আপনাদের জামায়াতে যোগ দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। এটা আমাদেরকে দায়িত্ব পালনে ও জান্নাতে যেতে সহায়তা করবে, ইনশাআল্লাহ।
ইসলাম কায়েমের এ মহান দায়িত্ব একা একা পালন করা যায় না, এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যারাই নবীর প্রতি ঈমান এনেছেন তাদেরকেই সংঘবদ্ধ করে নবীগণ ইসলামী আন্দোলন করেছেন। যে সমাজে ইসলাম কায়েম নেই সেখানে ব্যক্তি জীবনেও পুরোপুরি মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করা কঠিন। আর আল্লাহ্র দ্বীনকে সমাজ জীবনে কায়েম করার কাজ তো জামায়াতবদ্ধভাবে ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই আমরা যারা দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালন করতে চাই তারা জামায়াতবদ্ধ জীবন যাপন করি। আর দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কিন্তু নফল দায়িত্ব নয়। এটা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। এজন্য আমরা জামায়াতবদ্ধ থাকার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত হয়ে জামায়াতবদ্ধ থাকি ও দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি।
নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, মেষের পাল থেকে আলাদা একটি মেষকে যেমন নেকড়ে বাঘ সহজেই ধরে খায়, তেমনি জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন একজন মুসলিম সহজেই শয়তানের খপ্পরে পড়ে যায়। তাই জামায়াতবদ্ধ জীবনই ঈমানের অনিবার্য দাবী। উমার (রা.) বলেন, জামায়াত (সঙ্ঘবদ্ধতা) ছাড়া ইসলাম হয় না। অতএব জামায়াতের ইসলামের সাথে আমরা জড়িত হয়েছি সংঘবদ্ধ থেকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনের জন্য।
আর জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত অর্থে শুধুমাত্র ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দল নয়। ইসলামে ধর্মীয় জীবনের গুরুত্ব আছে বলেই জামায়াত ধর্মীয় দলের দায়িত্ব পালন করে। রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া ইসলামী আইন চালু হতে পারে না বলেই জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে কাজ করে। সমাজ সেবা ও সামাজিক সংশোধনের জোর তাকিদ ইসলাম দিয়েছে বলেই জামায়াত সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারে মনোযোগ দেয়। এ অর্থেই জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন।
একজন মুসলিমকে অবশ্যই জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ২০৮ ও ২০৯ নং আয়াতে বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। তোমাদের কাছে যে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হিদায়াত এসে গেছে তা লাভ করার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে না মানাটা গোমরাহী ও পদস্থলন। যারা ইসলামকে পছন্দ অনুযায়ী মানে বা আংশিকভাবে মানে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি স্পষ্ট হুমকি দিয়েছেন। আমরা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মানার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত হয়েছি।
মুহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করে। আমরা আমাদের নিজেদের কল্যানের জন্য জামায়াতে ইসলামকে পছন্দ করেছি। তাই আপনাদের জন্যও এই সংগঠনকে সাজেস্ট করছি।
যারা এখনো জামায়াতে যোগ দেননি তাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
March 18, 2025